খোশখবর ডেস্কঃ ‘বাফেলো বিউটি পেজেন্ট’কে এককথায় বলা যায় মোষেদের সুন্দরী প্রতিযোগিতা। মোষেদেরকে দেখতে ভাল একথা কেউ কোনওদিন না বললেও এই প্রতিযোগিতা দেখতে থাইল্যান্ডে মানুষের ভির দেখলে আপনি অবাক হবেন। আসলে মোষেদের মত এমন ঠাণ্ডা প্রকৃতির, বাধ্য ও কাজের চারপেয়ে কমই মেলে।এই বিনয়ী প্রাণীদের মর্যাদা বৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে থাইল্যান্ডে প্রতি বছর ধান কাটার মরশুমে অনুষ্ঠিত হয় অনন্য এই উৎসব।একে ‘উইং কাওয়াই’ উৎসব নামেও ডাকা হয়।
মহিষ বা জলমহিষ (Bubalus bubalis) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।জলমহিষ ভারী এবং মজবুত দেহের অধিকারী। ধূসর কালো, লোমে আবৃত মহিষ উচ্চতায় ১.৮ মিটার পর্যন্ত হতে পারে।
সদ্য ৬ অক্টোবর ব্যাংককের অদূরে ‘ছনবুরি প্রদেশে’ হয়ে গেল এবারের ‘মিস বাফেলো বিউটি কনটেস্ট’। রঙিন অলংকার, ফুলের মালা ও ঝলমলে সাজে সেজেগুজে জলমহিষরা অংশ নেয় এই উৎসবে। আসলে ‘উইং কাওয়াই’ উৎসব ফিবছর থাইল্যান্ডে মেনে চলা চন্দ্রপঞ্জিকার একাদশ( ১১তম) মাসের শেষে উদ্যাপিত হয়, যা সাধারণত অক্টোবর মাসেই পড়ে। এ সময়টি থাইল্যান্ডে ধান কাটার মরশুমের সূচনা হয়।
কেন পালিত হয় এই মোষ উৎসব?
বলা হচ্ছে যে থাইল্যান্ডের কৃষিক্ষেত্রেও চলে এসেছে যন্ত্রের যুগ।ইতিহাস বলছে জলমহিষ থাইল্যান্ডের কৃষির অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। তারা মাঠে চাষ ও ফসল কাটায় সাহায্য করত, ভারী বোঝা বইত। কিন্তু আধুনিক যন্ত্রপাতি, যেমন ট্রাক্টর, চালু হওয়ার পর তাদের ভূমিকা ধীরে ধীরে কমে যায়। ফলে আগের মত মোষেদের দিয়ে চাষের কাজ করানোর ব্যাপারও কমে আসছে।তাই কৃষিতে মহিষের গুরুত্ব ও তাঁদের সামাজিক মর্যাদা পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যেই আয়োজিত হয় এই উৎসব। তাই ‘বাফেলো বিউটি পেজেন্ট’ উৎসব থাইল্যান্ডে প্রতি বছর ধান কাটার মরশুমের শুরুতে পালিত হয়।
বাফেলো উৎসবের পিছনের ইতিহাস?
থাইল্যান্ডে বাফেলো উৎসব প্রায় ১৫০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যকে বহন করে। ধারণা করা হয়, আনুষ্ঠানিকভাবে না হলেও প্রথম মহিষ দৌড় প্রতিযোগিতা ১৮৭০-এর দশকে ছনবুরি প্রদেশেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল।ধান কাটার পর কৃষকদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব থেকে এই উৎসবের সূচনা হয়, যেখানে তারা নিজেদের মোষদের দক্ষতা প্রদর্শন করত। পরবর্তীকালে তা নিয়মিত উৎসবে পরিণত হয়।এখন ‘বাফেলো রেসিং ফেস্টিভ্যাল’ একটি বার্ষিক সামাজিক অনুষ্ঠান হিসেবে পরিচিত।
সঙ্গে থাকে ‘বাফেলো বিউটি পেজেন্ট’। থাইল্যান্ডে বিশ্বাস করা হয়, এই ধরনের উৎসব ও সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর যুগেও এই প্রাণীদের বিলুপ্তি থেকে রক্ষা করবে। এই লক্ষ্যেই থাই সরকার ২০১৭ সালে ‘থাই বাফেলো কনজারভেশন ডে’ বা থাইল্যান্ডে মোষ সংরক্ষণ দিবস ঘোষণা করে।
কী হয় এই বাফেলো উৎসবে?
এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে এই উৎসবের উদ্বোধন হয়।স্থানীয় ছাত্রছাত্রীরা ঐতিহ্যবাহী থাই নৃত্য পরিবেশন করে এবং মূল আকর্ষণ থাকে নানা সাজে সাজানো মোষেরাই। অনেক জলমহিষকে সাজানো হয় ফুলের মালা দিয়ে।অনেককে পুঁতি ও ফুলের তৈরি মুকুটও পরানো হয়।গলায় ঝোলে ঘণ্টাযুক্ত ফুলের মালা। কিছু মোষ আবার ঐতিহ্যবাহী কাঠের রথ টানে।এই রথগুলো প্রায় দুই মিটার উঁচু হয়, তাতে বসে থাকেন তাঁদের মালিক ও ঐতিহ্যবাহী থাই পোশাক পরিহিতা নারীরা।
তথ্যঃ thenews.com
পিন্টারেস্টে ‘খোশখবরের’ আশ্চর্য দুনিয়া।ক্লিক করুন এই লিঙ্কে
[ছবি সৌজন্যঃ খোশখবর সাইটে ব্যবহৃত ছবিগুলি নেওয়া হয়েছে পিক্সাবে, আনস্প্ল্যাস, ফ্রিপিক, উইকিমিডিয়া কমন্স, গুগল ফটো সহ বিভিন্ন নিজস্ব সূত্র থেকে]
[ জ্ঞান বা তথ্যের কোনও কপিরাইট হয় বলে আমরা মনে করি না। পৃথিবীর বুকে প্রকাশিত অগুনতি বই, লাইব্রেরিতে ঠাসা সমুদ্র সমান জ্ঞান, অন্তর্জালে ছড়িয়ে থাকা আকাশ সমান তথ্য থেকে দু-একটি তুলে এনে পাঠকদের সামনে রাখাই এই ব্লগসাইটের কাজ। তবে জ্ঞানত কোনও ভুল,বিকৃত বা অন্ধ ভাবনার তথ্য প্রকাশ করবে না ‘খোশখবর’।]
0 মন্তব্যসমূহ