একনজরে

10/recent/ticker-posts

না ছেপে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল কবি বায়রনের আত্মজীবনী,কেন?

খোশখবর ডেস্কঃ নাম জর্জ গর্ডন বায়রন, জন্ম ২২ জানুয়ারি ১৭৮৮ আর মৃত্যু ১৯ এপ্রিল ১৮২৪। ব্রিটিশ কবি এবং রোম্যান্টিক আন্দোলনের অন্যতম মুখ্য এই ব্যক্তির পরিচিতি লর্ড বায়রন নামে। খ্যাতির চূড়ায় ওঠা মানুষটির ব্যাক্তিজীবনে সরস কেচ্ছার অন্ত ছিল না। লোকের মুখে মুখে ফিরত তার বিলাস, বিহ্বলতা ও কেলেঙ্কারির গল্প। বায়রন অপরিমিত অভিজাত জীবন-যাপন করতেন যার মধ্যে রয়েছে প্রচুর ঋণ, বহুসংখ্যক প্রণয় ঘটিত সম্পর্ক, তার সৎ বোনের সাথে অজাচারী যৌন সম্পর্কের গুজব এবং নিজে থেকে নির্বাসিত হওয়া। অনুমান করা হয় যে বায়রন বাইপোলার আই ডিসঅর্ডার এবং ম্যানিক ডিপ্রেশনে ভুগতেন। সেই মানুষটির অপকটে লেখা চারশো পাতার আত্মজীবনী নিয়ে তাঁর শেষ ইচ্ছা ছিল তাঁর মৃত্যুর পর সেটি যেন ছাপা হয় এবং তা কোথাও কোন সংশোধন না করেই । এই লেখার বছর পাঁচেকের মধ্যে বায়রনের মৃত্যু হয়। বায়রনের এই ইচ্ছায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় বন্ধু হবহাউস । তিনি বলেন এই আত্মজীবনী প্রকাশিত হলে বায়রনের পরিবার নানা ‘নোংরা’ আলোচনার শিকার হবেন। হবহাউস বন্ধুর পারিবারটিকে বাঁচাবার জন্য সিদ্ধান্ত নেন চারশো পাতার আত্মজীবনী ‘মাই লাইফ অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার’ পুড়িয়ে ফেলার। বইটি প্রকাশের দায়িত্ব নিয়েছিলেন কবি টমাস মূর। তিনি কিন্তু বুঝতে পেরেছিলেন বইটির গুরুত্ব। কিন্তু বন্ধুর পরিবারের ভবিষ্যৎ যন্ত্রণার কথা বিবেচনা করে নিরুপায় হয়ে মত দেন হবহাউসের কথায়। অবশেষে সেই পান্ডুলিপি জ্বলন্ত আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়। হারিয়ে যায় বিশ্ব সাহিত্যের এক অজানা ইতিহাস।
প্রায় এইরকম ঘটনার সমতুল্য আরেকটি ঘটনা হল কাফ্‌কার আত্মজীবনী প্রকাশ। লোকচক্ষুর আড়ালে এই লেখক বেঁচে ছিলেন চল্লিশটি বছর। একাকীত্ব, ব্যর্থতা, যক্ষা তাঁকে জানিয়ে দিয়েছিল তার আয়ু আর বেশী দিন নেই। ঘনিষ্ঠ বন্ধু ম্যাকস ব্রড্‌কে তিনি বলেছিলেন তার মত ব্যর্থ মানুষের সমস্ত পান্ডুলিপি যেন পুড়িয়ে ফেলা হয়। ম্যাকস ব্রড্‌ কিন্তু বায়রন- বন্ধু হবহাউসের ঠিক উল্টো কাজটি করেছিলেন। পান্ডুলিপি পুড়িয়ে ফেলা দুরের কথা কাফ্‌কার মৃত্যুর পর তা সাজিয়ে গুছিয়ে একে একে প্রকাশ করেছিলেন – ‘দি ট্রায়াল’, ‘দি কাসল্‌’ ‘আমেরিকা’ এবং ‘দি গ্রেটওয়াল অব চায়নার’ মতন দারুন সব বই। সেই সঙ্গে সম্পাদনা করে ছেপেছিলেন ‘কাফ্‌কার ডায়েরী’। অসামান্য এই বইগুলির কথা আজ আর কাউকে নতুন করে বলে দেবার নেই। বন্ধুর সিদ্ধান্তের হেরফেরে কিভাবে একজন লেখক বেঁচে গেলেন, আর একজন লেখকের অমর সৃষ্টি হারিয়ে গেল চিরতরে।

তথ্যসংগ্রহ – গল্পেরসময় ডট কম/ সেপ্টেম্বর,২০১৭  

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ