একনজরে

10/recent/ticker-posts

রবীন্দ্রনাথ কতটা স্বাস্থ্য সচেতন ছিলেন?


খোশখবর ডেস্কঃ রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন মনে প্রাণে যে শরীর সুস্থ রাখতে হলে পরিমিত আহার, যথাযথ ঘুম ও শারীরিক শ্রম করাটা খুবই প্রয়োজনীয়। তিনি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে এটা খুব মেনে চলতেন। তাঁর দীর্ঘায়ুর পেছনে এটা একটা কারণ। পথ্যের উপর তিনি খুব জোর দিতেন। পুষ্টিকর পথ্য মানেই প্রতিদিন ডিম, মাছ, মাংস খাওয়া নয়, বেশি পরিমাণে শাকসবজি, ডাল, ভাত, ফল খাওয়ার উপর তিনি জোর দিতেন। অল্প আহার বা বেশি আহার শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক বলে তিনি মনে করতেন। তাঁর বদ্ধ ধারণা ছিল মানুষ না খেয়ে মরে কম, খেয়েই মরে বেশি। বিশেষ করে হাবিজাবি আহারের ফলে। মেশিনে তৈরি চালের থেকে বেশি পছন্দ করতেন ঢেঁকিছাঁটা চালের উপর। তিনি পুষ্টি বিশেষজ্ঞ কিংবা বিজ্ঞানী না হলেও তাঁকে কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন আমন্ত্রণ জানায় ‘ফুড ও নিউট্রিশন’-এর উপর একটি আলোচনা সভার উদ্বোধক হিসাবে। দেহ রক্ষা করতে পথ্যের যে বিশেষ অবদান আছে সে বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্যে তিনি বিশিষ্ট চিকিৎসক পশুপতি ভট্টাচার্যকে অনুরোধ করেন। তাঁর আদেশ মান্য করে ডাঃ ভট্টাচার্য এরপরে ‘ডায়েট এ্যান্ড ফুড’, ‘ভারতীয় ব্যাধি ও তার প্রতিকার’ বই দুটি লিখে ফেলেন। রবীন্দ্রনাথ বই দুটি পড়ে উৎসাহিত হয়ে বিশ্বভারতীর ‘লোকশিক্ষা গ্রন্থমালা’য় প্রকাশ করেন ধারাবাহিক ভাবে। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর ঠিক অব্যবহিত পূর্বে ডাঃ ইন্দ্রভূষণ মল্লিক একটি বই লেখেন যার নাম দেওয়া হয় ‘আমাদের দেশের আহার ও শিক্ষা’ সেটি পরবর্তীকালে ‘ভারতী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

সুষ্ঠু জনস্বাস্থ্য গঠনে তিনি ১৯২৫ সালে ‘বার্থ কন্ট্রোল রিভিউ’ পত্রিকার সম্পাদক মারগারে স্যাঙারকে একটি চিঠি লিখে জন্ম নিয়ন্ত্রণের স্বপক্ষে মতামত দেন। এমনকি জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর বিরুদ্ধাচরণ করতে এ ব্যাপারে তিনি পিছুপা হন নি। তিনি লেখেন … I am of opinion that Birth Control movement is a great movement … it will save women from enforced and undesirable maternity … it will help the cause of peace by lessening the burden of surplus population of a country scrabling for food and space outside its own rightful limit. In a hunger-stricken country like India, it is a cruel crime thoughtlessly to bring more children into existence that could properly be taken case of, causing endless suffering to them. তিনি বুঝেছিলেন জন্মনিয়ন্ত্রণের ফলে অবাঞ্ছিত মাতৃত্ব ও অসুস্থ, অপুষ্ট সন্তানের সংখ্যা কমানো সম্ভব হবে ভারতবর্ষে। তিনি ১৯২৯ সালে প্রবর্তিত ‘চাইল্ড ম্যারেজ প্রিভেনশন এ্যাক্ট’-কে সমর্থন করেন যেখানে সুস্পষ্টভাবে বলা ছিল ছেলের বিয়ের বয়স ২২ ও মেয়ের বয়স ১৬ না হলে বিয়ে দেওয়া আইনত দণ্ডনীয়। বাংলায় ‘মেডিকেল শিক্ষা’কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে তিনি ১৯১৫ সালে ডাঃ নীলরতন সরকার ও অন্যান্য চিকিৎসকদের সমর্থনে গঠিত কলকাতায় দ্বিতীয় মেডিকেল কলেজ কারমাইকেল মেডিকেল কলেজ (অধুনা আর. জি. কর মেডিকেল কলেজ হিসেবে পরিচিত) গঠনে সহায়তা করেন।

সুত্র - গল্পের সময়, রবীন্দ্রনাথের চিকিৎসা ভাবনা,ডা.পি কে দাস