একনজরে

10/recent/ticker-posts

Miyazaki mango ‘মিয়াজাকি’ - যে আম এক কেজির দাম আড়াই লক্ষ টাকা, জেনে নিন কেন?



মিয়াজাকি আমের উৎত্তিস্থল জাপান। বাইরে লালচে ও ভিতরে উজ্জ্বল হলুদ শাঁসের জন্য এটিকে জাপানে ‘সূর্যের ডিম’ বলা হয়। 


খোশখবর ডেস্কঃ আম বলতেই আমাদের চোখের সামনে ভাসে হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি, চ্যাটার্জি, পেয়ারাফুলি ইত্যাদি জাতের আম।যারা আম সম্পর্কে একটু খোঁজখবর রাখেন তাঁদের বাজারের থলিতে মাঝেমধ্যেই ঢুকে পড়ে কোহিতুর, গোলাপখাস, আলফানসো বা অনান্য প্রজাতির নানারকম আম। যাঁরা আম খেতে ভালবাসেন তাঁদের কাছে আমের দাম একটু বেশী হলেও - কুছ পরোয়া নেহি। কিন্তু আমের দাম যদি আড়াই লক্ষ টাকা কেজি হয় তবে? স্বপ্নেও এমন কথা ভেবেছেন কখনও। ভাবছেন এ আবার কোন ধরণের হেঁয়ালি? মোটেই নয়, আসলে কথা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি আম ‘মিয়াজাকি’ নিয়ে – আন্তর্জাতিক বাজারে এই আমের এক কেজির দাম আড়াই লক্ষ টাকার আশপাশেই।





মিয়াজাকি আম, ব্যাপারটা কী?

অবাক হওয়ারই কথা। পৃথিবীর আর পাঁচটা আমের সঙ্গে এই আমকে গুলিয়ে ফেললে ভুল হবে। কারণ এটি বিশ্বের অন্যতম বিরল প্রজাতির আম। এই মিয়াজাকি আমের উৎত্তিস্থল জাপান। বাইরে লালচে ও ভিতরে উজ্জ্বল হলুদ শাঁসের জন্য এটিকে জাপানে ‘সূর্যের ডিম’ বলা হয়।

বিশেষ তাপমাত্রা, নির্দিষ্ট পরিমাণে জল, পরিমিত সার-সহ একাধিক জিনিসের সমন্বয়ে মিয়াজাকি আম চাষ করতে হয়। আজ থেকে বছর পঞ্চাশ আগে ১৯৭০ দশকের শেষের দিকে প্রচার পায় এই জাতের আম। বাজারে একটি মিয়াজাকি আমের দামেই কিনে নেওয়া যায় একটা ভাল স্মার্টফোন। জাপানের মিয়াজাকি শহরে এই আমের চাষ শুরু হয় বলে এই আমের নাম এমন। এই আমগুলির ওজন সাধারণ আমের চেয়ে ৩৫০ গ্রাম বেশি। মিয়াজাকি আমে সাধারণ আমের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি চিনি থাকে। অর্থাৎ অত্যন্ত সুমিষ্ট হয় এই আমগুলি।




জব্বলপুরে হঠাৎ মিয়াজাকি

জাপান ছাড়াও মিয়াজাকি আম অন্য কিছু দেশেও আদর্শ আবহাওয়া তৈরি করে চাষ করা যায়।এর মধ্যে রয়েছে থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন ও ভারত। বছর দুয়েক আগেই মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরের এক আমবাগানে একটি গাছে মিয়াজাকি আমের চাষ হচ্ছে বলে খবর মিলেছিল। জব্বলপুরে থাকা এক দম্পতিকে এক অজানা ব্যক্তি ট্রেনে সোনালি জাতের একটি চারা দিয়েছিল।যত্ন নিয়ে চাষও করতে বলেন। পরে জানা যায় ওটি মিয়াজাকি আম গাছের চারা।ওই চারা থেকেই গাছে মাত্র ৭টি আম ফলে। ফল চুরির ভয়ে আমবাগানে ৪ জন সিকিওরিটি গার্ড ও ৬টি জার্মান শেপার্ড রাখতে হয়েছিল। ছিল সিসিটিভিও। বুঝুন ব্যাপারটা।





কেমন করে চাষ হয় মিয়াজাকির?

এই আম এপ্রিল থেকে আগস্টের মধ্যে সর্বোচ্চ হারে জন্মায়।এই প্রজাতির আমের বৃদ্ধির জন্য গরম আবহাওয়া, সূর্যালোক এবং প্রচুর বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়। জাপানে মিয়াজাকি আমের বাগানের ব্যবস্থাই আলাদা। কোনও আম যাতে নষ্ট না হয়, তার জন্য রাখা থাকে সর্বক্ষনের কর্মী। কোনও আম যাতে খসে না পড়ে সেজন্য ফলের বোঁটার সঙ্গে গাছের মূল ডাল একটি সরু, শক্ত দড়ি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। এছাড়া প্রতিটি আম সুন্দর করে মুড়ে রাখা হয়। একটি আমের গায়েও যাতে একটু দাগ না লাগে সেজন্য সর্বক্ষণ নজর রাখা হয়।




কেমন করে বিক্রি হয় মিয়াজাকি আম?

একটি মিয়াজাকি আমের ওজন হয় প্রায় ৩৫০ গ্রাম। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, বিটা-ক্যারোটিন এবং ফলিক অ্যাসিডে ভরপুর থাকে এই আম। মিয়াজাকি আম জাপানে ওকিনাওয়ার পর দ্বিতীয় বৃহত্তম আমের জাত। এই আম যখন বাজারে বিক্রির জন্য যায় তার সুদৃশ্য প্যাকিং দেখলে আপনার তাক লেগে যাবে।যেন বিক্রি করা হচ্ছে সোনার গহনা বা দামি মোবাইল। আগে থেকে বিশেষ সংস্থার মাধ্যমে নিলামে দরদাম ঠিক করে তবেই বাজারে বিক্রির জন্য আসে আকাশছোঁয়া দামের এই আম। সবচেয়ে ভাল মিয়াজাকি আমের দাম প্রতি কেজিতে ৫০০০ ডলার পর্যন্ত ওঠার রেকর্ড আছে। তবে সাধারনত আন্তর্জাতিক বাজারে মিয়াজাকি আম ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা থেকে ৩ লক্ষ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হয়। অর্থাৎ জাপানের একটি মিয়াজাকি আমের দাম ভারতীয় মুদ্রায় ১৫ হাজার টাকারও বেশি হতে পারে।

সর্বোচ্চ মানের মিয়াজাকি আম 'তাইয়ো-নো-টোমাগো' বা 'এগস অফ সানশাইন' নামে ব্র্যান্ডেড এবং বিক্রি করা হয়। এই আম দেখতে অনেকটা লাল ডাইনোসরের ডিমের মতো।এই জাতের একটি আমের ওজন প্রায় ৩৫০ গ্রাম।



কেমন খেতে মিয়াজাকি আম? 

কথায় বলে ফলের রাজা আম। একটা ভাল জাতের গাছপাকা আমের স্বাদ যে কী হতে পারে তা আমের দেশের মানুষ বিলক্ষণ জানেন। কিন্তু তা বলে আড়াই লাখি আমের স্বাদ? কজনই বা সে স্বাদ পেয়েছেন? কী ভাবছেন একবার সুযোগ পেলে এই আম চেখে দেখবেন নাকি? পৃথিবীর যে কজন একবার জাপানের মিয়াজাকি আম খেয়ে দেখার সুযোগ পেয়েছেন তাঁদের দাবি সে স্বাদ নাকি তুলনাহীন। অসাধারণ সুগন্ধে ভরপুর সে স্বাদের ব্যখ্যা করাই মুশকিল।

তথ্যসূত্র ও ছবি -  miyazaki-city.tourism ও Miyazaki Local Products and Trade Promotion Center এবং অনান্য 

[ছবি সৌজন্যঃ খোশখবর সাইটে ব্যবহৃত ছবিগুলি নেওয়া হয়েছে পিক্সাবে, আনস্প্ল্যাস, ফ্রিপিক, উইকিমিডিয়া কমন্স, গুগল ফটো সহ বিভিন্ন নিজস্ব সূত্র থেকে]

[ জ্ঞান বা তথ্যের কোনও কপিরাইট হয় বলে আমরা মনে করি না। পৃথিবীর বুকে প্রকাশিত অগুনতি বই, লাইব্রেরিতে ঠাসা সমুদ্র সমান জ্ঞান, অন্তর্জালে ছড়িয়ে থাকা আকাশ সমান তথ্য থেকে দু-একটি তুলে এনে পাঠকদের সামনে রাখাই এই ব্লগসাইটের কাজ। তবে জ্ঞানত কোনও ভুল,বিকৃত বা অন্ধ ভাবনার তথ্য প্রকাশ করবে না ‘খোশখবর’।] 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ