একনজরে

10/recent/ticker-posts

Rakhi Bandhan Story রাখি বন্ধন নিয়ে নানা কাহিনী,জানলে অবাক হবেন


সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ করতে রাখি বন্ধনকেই হাতিয়ার করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


খোশখবর ডেস্কঃ রাখি পূর্ণিমা আর রাখি বন্ধন গোটা ভারতবাসীর কাছেই একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন। বছরের এই এমন দিনে ভাইয়ের মঙ্গলকামনায় তাঁর হাতে রাখি বেঁধে দেয় বোন। শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমায় এই তিথি উদযাপিত হয়। রাখি হল একটি ছোট্ট বন্ধনী যা বোনেরা ভাইদের শুভকামনার প্রতীক হিসেবে হাতে বেঁধে দেয় এবং ভাইরা তাদের বোনদের উন্নতি এবং সুখ-শান্তি কামনা করে।

রাখি বা রাখি বন্ধনকে ভাই-বোনের সুসম্পর্কের উৎসব বলে পরিচিতি পেলেও এর নানা কাহিনী আছে। যেমন অতীতে রাজ-রাজারা যুদ্ধে যাওয়ার সময় রানিরা তাঁদের হাতে সুতো বেঁধে নিতেন মঙ্গল কামনায়।এমন কি বড় কাজে বাইরে গেলেও পুরুষকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করার প্রতীক হিসেবে তার কবজিতে সুতো বেঁধে দিতেন মহিলারা।বলা হয় পরে সেটাই রাখি বন্ধনের চেহারা নেয়।


রাখি বন্ধনের সঙ্গে আলেকজান্দার ও পুরুর গল্পও প্রচলিত আছে। স্বামীর প্রাণসংশয় হতে পারে, এই আশঙ্কা করে আলেকজান্দারের স্ত্রী পুরুর কাছে গিয়ে আগে থেকেই তাঁর হাতে রাখি বেঁধে দেন।পুরু আলেকজান্দারের কোনও ক্ষতি না করার কথা দেন।

মহাভারতের কাহিনীতে জানা যায় যে শিশুপালকে হত্যার পরে শ্রীকৃষ্ণের একটি আঙুল কেটে রক্ত পড়তে থাকে। বিচলিত হয়ে দ্রৌপদী নিজের শাড়ি ছিঁড়ে কৃষ্ণের হাতের ক্ষতস্থান বেঁধে দেন। এতে কৃষ্ণ অভিভূত হয়ে যান।পরিবর্তে কৃষ্ণ তাঁকে নিজের বোন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সবরকম বিপদে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেন। বস্ত্রহরণের সময় কৃষ্ণ দ্রৌপদীর সম্মান রক্ষাও করেন।এর পরেই কৃষ্ণ- দ্রৌপদীর মধ্যে রাখিবন্ধন প্রচলিত হয়।


পুরাণ মতে রাক্ষসদের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজয়ের মুখে দেবরাজ ইন্দ্র গুরু বৃহস্পতির সাহায্য চান। বৃহস্পতির পরামর্শ মেনে শ্রাবণ পূর্ণিমায় ইন্দ্রের স্ত্রী সচী মন্ত্রপূত রাখি ইন্দ্রের হাতে বেঁধে দেন এবং দেবতারা যুদ্ধে জয়লাভ করেন।




রাখির সঙ্গে জড়িয়ে আছে যমরাজ ও যমুনার গল্পও। পুরানে আছে যমের অমরত্ব প্রার্থনা করে তাঁর বোন যমুনা দাদার হাতে রাখি পরিয়ে দেন। এরপরই যমরাজ খুশি হয়ে কথা দেন যে তাঁর বোন যমুনা যার হাতে রাখি পরিয়ে দেবে তাকে তিনি নিজেই রক্ষা করবেন।

রাখিবন্ধন ঘিরে আছে গনেশ ও সন্তোষী মায়ের কাহিনী।বলা হয় যে রাখিবন্ধনের দিন গণেশের বোন ভাইয়ের হাতে রাখি বেঁধে দিলে গণেশের দুই ছেলে শুভ ও লাভের খুব হিংসে হয়। তারাও তাদের বোনের থেকে রাখি পরার বায়না ধরে।তখন ছেলেদের সন্তোষের জন্য গনেশ আগুন থেকে এক জন্ম দেন। এই দেবী হলেন সন্তোষী মা। সন্তোষী মা-ই শুভ ও লাভের হাতে রাখি বেঁধে দেন।


বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে হিন্দু- মুসলমানের সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ করতে রাখি বন্ধনকেই হাতিয়ার করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।১৯০৫ সালের জুন মাসে ভাইসরয় লর্ড কার্জন ধর্মের ভিত্তিতে বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব ঘোষণা করেন।অগাস্ট মাসে বঙ্গভঙ্গ বঙ্গ ভঙ্গের প্রস্তাব পাশ হয়।জানানো হয় এই আইন কার্যকরীর হবে ১৯০৫-এরই ১৬ অক্টোবর, বাংলায় ৩০ আশ্বিন। সেই দিনের সেই অশান্ত মূহুর্তকে সম্প্রীতির বন্ধনে বেঁধেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শহরজুড়ে বিলি হয়েছিল প্রচারপত্র। বাঙালির ঐক্যবন্ধনের দিন। হিন্দু-মুসলমান সকলের হাতে রাখি পরিয়ে দেন সকলে।অনেককে রাখি পরান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং। ভাই-বোনের সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে সমাজকে একসুতোয় বাঁধার ভাবনাই ছিল রবিঠাকুরের রাখি বন্ধনে।


[ছবি সৌজন্যঃ খোশখবর সাইটে ব্যবহৃত ছবিগুলি নেওয়া হয়েছে পিক্সাবে, আনস্প্ল্যাস, ফ্রিপিক, উইকিমিডিয়া কমন্স, গুগল ফটো সহ বিভিন্ন নিজস্ব সূত্র থেকে]

[ জ্ঞান বা তথ্যের কোনও কপিরাইট হয় বলে আমরা মনে করি না। পৃথিবীর বুকে প্রকাশিত অগুনতি বই, লাইব্রেরিতে ঠাসা সমুদ্র সমান জ্ঞান, অন্তর্জালে ছড়িয়ে থাকা আকাশ সমান তথ্য থেকে দু-একটি তুলে এনে পাঠকদের সামনে রাখাই এই ব্লগসাইটের কাজ। তবে জ্ঞানত কোনও ভুল,বিকৃত বা অন্ধ ভাবনার তথ্য প্রকাশ করবে না ‘খোশখবর’।] 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ