খোশখবর ডেস্কঃ চায়ের কদর গোটা পৃথিবী জুড়েই। বিশ্বের সবচেয়ে বড় চা-এর বাজার চিন।এর পরেই রয়েছে ভারতের স্থান।বাড়িতে চা খাওয়ার চল নেই বা অতিথি এলে একটু চা খেয়ে যেতে বলা হচ্ছে না এমন পরিবার খুঁজে পাওয়া ভার।তবে আজ আমাদের আলোচনার বিষয় গ্রিন টি।সাধারণ পাতা চা বা গুঁড়ো চা নয়,স্বাস্থ্য সচেতন মানুষজনের চাহিদার উপর ভর করে ক্রমেই জনপ্রিয়তা বাড়ছে গ্রিন টির।
আরও পড়ুনঃ
গ্রিন টি কাকে বলে?
গ্রিন টি হলো এক ধরনের চা যা ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস (Camellia sinensis) গাছের পাতা থেকে তৈরি হয়।গ্রিন টির প্রসেসিং পদ্ধতি খুবই সহজ এবং প্রাকৃতিক। এই পাতাকে খুব অল্প সময়ের জন্য শুকিয়ে বা বাষ্প দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয়।অন্যান্য চায়ের তুলনায় কম প্রক্রিয়াজাত পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয় বলে এর মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণগুলো অটুট থাকে বলে দাবি করা হয়।
গ্রিন টি কি সত্যিই ‘গ্রিন’ বা সবুজ?
গ্রিন টির পাতা চা গাছ থেকে তোলার পর, সেগুলোকে অন্যান্য চায়ের মতো অক্সিডাইজড করা হয় না। অক্সিডাইজেশন না হওয়ার কারণে এটি কালো চায়ের মতো গাঢ় হয় না। পাতাগুলোকে বাষ্প বা প্যানে শুকিয়ে তোলা হয়, যার ফলে এর মধ্যে সবুজ রঙ অটুট থাকে।চা তৈরি হলে এক ধরনের হালকা সবুজাভ বা হালকা হলুদ রঙ ধারণ করে। এর রঙ অন্যান্য চায়ের তুলনায় ফ্যাকাশে হয়, এটি স্বচ্ছ ও সবুজাভ বর্ণ ধারণ করে।
আরও পড়ুনঃ
গ্রিন টি খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়?
গ্রিন টির মূল বৈশিষ্ট্য হল এর মধ্যে থেকে যাওয়া প্রাকৃতিক এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী পুষ্টিগুণ।বলা হয় ত্বক থেকে শুরু করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো পর্যন্ত নানা ধরনের উপকারিতা রয়েছে গ্রিন টির । অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যা কমাতে সহায়ক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি এটি স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবেই পরিচিত।
১। গ্রিন টি-তে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা কোষকে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যালস প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
২। গ্রিন টি শরীরের মেটাবলিজম বাড়ায়, যা চর্বি কমাতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
৩। বলা হয় নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। এটি কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৪। গ্রিন টিতে ক্যাফেইনের পাশাপাশি এল-থিয়ানাইন নামে একটি অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, যা মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে।
৫। নানা পরীক্ষায় দেখা গেছে গ্রিন টি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে, যা টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হতে পারে।
৬। গ্রিন টি-তে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ ত্বকের সমস্যাগুলো কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল রাখে।এটি ত্বকের বার্ধক্য রোধ করতে সাহায্য করে এবং ত্বককে সতেজ রাখে।
৭। বলা হয় গ্রিন টি মানসিক চাপ কমায়।জানা গেছে এর এল-থিয়ানাইন নামক যৌগ মানসিক চাপ কমাতে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সহায়তা করে।
গ্রিন টি কখন খেতে হবে?
স্বাস্থ্যকর অভ্যাস হিসেবে প্রতিদিন ২-৩ কাপ গ্রিন টি আপনি পান করতেই পারেন।তবে গ্রিন টি খাওয়ার সঠিক সময় আপনার লক্ষ্য এবং স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে। তবে সাধারণত কিছু বিশেষ সময় মেনে গ্রিন টি খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায় বলে জানা গেছে।সঠিক সময়ে গ্রিন টি খেলে এর উপকারিতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
ক। সকালে খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়া ঠিক নয়, কারণ এতে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বা অ্যাসিডিটির ঝুঁকি বাড়তে পারে।সকালের কিছু খাবার বা টিফিন করার পর গ্রিন টি খাওয়াই ভালো।
খ। খাওয়ার পরপরই গ্রিন টি খেলে এটি হজমে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তাই খাওয়ার ৩০ থেকে ৬০ মিনিট পর গ্রিন টি খাওয়া ভালো, যা হজম প্রক্রিয়া ভালো রাখতে সহায়তা করে।
‘খোশখবর’–এর অবাক করা ইউটিউব শর্টস https://www.youtube.com/shorts/gDWUrhBb82A |
গ। বলা হয় দুপুরের খাবারের ৩০ মিনিট আগে বা পরে গ্রিন টি খাওয়া ভালো। এটি হজমে সাহায্য করে এবং ক্লান্তি দূর করতে সহায়তা করে।
ঘ। রাতে গ্রিন টি খেতে হলে খাবার খাওয়ার ১-২ ঘণ্টা পর খাওয়াই ভাল। তবে এতে ক্যাফেইন থাকায় তা বেশি রাতে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
ত্বকের যত্ন ও গ্রিন টি
অনেকে জানতে চান যে গ্রিন টি মুখে মাখলে কি হয়? আসলে গ্রিন টি ত্বকের জন্য অনেক উপকারি।গ্রিন টির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সহায়ক।এটি ত্বকের বার্ধক্য রোধ করতে সাহায্য করে এবং ত্বককে সতেজ রাখে। গ্রিন টির ব্যবহার মুখের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করে এবং ব্রণ বা ফুসকুড়ি কমাতে সহায়ক। চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল এবং ফোলা কমাতে ঠান্ডা গ্রিন টি ব্যাগ ব্যবহার করা যেতে পারে।গ্রিন টি ত্বককে ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট (UV) রশ্মির ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে।গ্রিন টি-এর পাতা জলে ফুটিয়ে ছেঁকে নিয়ে মধু বা দইয়ের সাথে মিশিয়ে ফেস মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
ছবিঃ pixabay.com
0 মন্তব্যসমূহ